অর্থনীতি

আল-আরাফাহ ব্যাংক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে চাকরিচ্যুত কর্মীদের বিরুদ্ধে

  প্রতিনিধি ৭ আগস্ট ২০২৫ , ৬:২০:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর ব্যস্ত দৈনিক বাংলা মোড়ে বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) বিকেল সোয়া ০৪টায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে চাকরিচ্যুত কর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে ব্যাংকের মানবসম্পদ (এইচআর) প্রধান আমির হোসেনসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীদের ঘেরাও থেকে তিনজন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)কে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় পুলিশ। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রধান কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে চাকরিচ্যুতদের একটি অংশ। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পাশের সুরমা টাওয়ারে কর্মকর্তাদের জন্য বিকল্প অফিসের ব্যবস্থা করেছিল। বিকেলে সেখানে থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠছিলেন তিনজন ডিএমডি ও এইচআর প্রধান আমির হোসেন। ঠিক সেই সময় আন্দোলনকারীরা এসে তাদের গাড়ি ঘিরে ধরে এবং আমির হোসেনকে মারধর করে। হামলা ঠেকাতে এগিয়ে এলে নিরাপত্তাকর্মীরাও রেহাই পাননি।

আহতদের মধ্যে আছেন—এইচআর হেড আমির হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড শাহিনুর, লিটন (২৫), ইলিয়াস (৩৮), ফাহিম (১৯), রকি হোসেন (২৬), তোফায়েল (৩২), নুর আলম (৪২), আরিফ (২৫), জাকির হোসেন (২৫), সাগর (২৯), লুৎফর, ফারুক ও সোহেল। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল ও ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়মে জর্জরিত নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। প্রায় ৬ শতাধিক কর্মকর্তা সরাসরি তৎকালীন চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে নিয়োগ পান ম্যানেজমেন্টের কোনো অনুমোদন ছাড়াই।

পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতিদিনই আন্দোলনস্থলে নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। এখনো চূড়ান্ত কোনো নির্দেশনা না থাকায় আন্দোলনকারীদের সরাতে বলপ্রয়োগ করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের অবস্থান নিয়মিত নজরদারির আওতায় রয়েছে।

ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, “চাকরিচ্যুতরা আমাদের অফিস করতে দিচ্ছে না। তারা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে। এটি আর কোনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন নয়—গুরুতর অপরাধে পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে হাজারো কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মতিঝিল বিভাগের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, এর আগেও চারটি ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাই করা হলেও এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। তবে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ মানবিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে, যাতে চাকরিচ্যুতরা বুঝে ফিরে যায়। কিন্তু পেছনে থাকা কিছু গোষ্ঠীর ইন্ধনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।

চাকরিচ্যুত কর্মীরা অভিযোগ করেন, “আমাদের কোনো নোটিশ ছাড়াই অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। চাকরি ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।

অন্যদিকে ব্যাংকের এইচআর বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “ঘোষণার মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। যথাযথ আইন মেনেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় সংস্কার পরিকল্পনার অংশ—এখানে ব্যাংকের এককভাবে কিছু করার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে অস্বাভাবিক হারে নিয়োগ হয়েছে, তাও যাচাই-বাছাই ছাড়া। এতে দেশের অন্যান্য মেধাবী প্রার্থীরা বঞ্চিত হয়েছেন। এখন সেই অব্যবস্থার শিকার চাকরিচ্যুতদের মানবিকতা সামনে এনে গোটা ব্যাংক খাতকে অস্থির করার চেষ্টা চলছে। তবে বিষয়টি নজরে রয়েছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এর আগে, ০৫ আগস্ট বিভিন্ন তদারকি সংস্থার তদন্তে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। পরবর্তীতে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ১,৪১৪ জন কর্মকর্তার মূল্যায়ন পরীক্ষা নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ, যেখানে ৫৪৭ জন অকৃতকার্য হন এবং তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।

এরপর ২৮ জুলাই সকাল থেকেই এই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন। তারা মানবঢাল তৈরি করে প্রধান ফটক বন্ধ রাখে এবং আক্রমণাত্মক আচরণ করতে থাকে। টানা আটদিন ধরে চলা এই কর্মসূচি এখন সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও খবর

Sponsered content