আন্তজার্তিক

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি বিশ্ব ক্ষমতাধর দুই নেতা…ট্রাম্প-পুতিন

  প্রতিনিধি ১৬ আগস্ট ২০২৫ , ২:০৫:২০ প্রিন্ট সংস্করণ

শুক্রবার ১৫ই আগস্ট আলাস্কা বৈঠক শুরুর আগে কয়েকটি বিষয় নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। যেমন- যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা, অঞ্চল বিনিময় কিংবা এসব সংক্রান্ত কোনো চুক্তি বা সমঝোতা হবে। কিন্তু বৈঠক শেষে এগুলো নিয়ে দুই নেতার কেউই স্পষ্ট কিছু বলেননি। তাহলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এমন বৈঠকের অর্থ কী? ইউক্রেন যুদ্ধে এরপর কী হতে পারে?

ট্রাম্পের ‘চুক্তিবাজ’ খ্যাতিতে আঘাত

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনান্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘দেয়ারস নো ডিল আনটিল দেয়ারস অ্যা ডিল’। এর অর্থ দাঁড়ায়, যতই আলোচনা হোক না কেন, একটি লিখিত অঙ্গীকার না হলে সেটিকে চুক্তি বলা যায় না।

ট্রাম্প মূলত এমনভাবে কথা একটু ঘুরিয়ে স্বীকার করেছেন, কয়েক ঘণ্টার আলোচনার পরও কোনো সমঝোতা হয়নি। কোনো যুদ্ধবিরতি নয়, উল্লেখ করার মতো কিছুই নেই। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি এবং ভ্লাদিমির পুতিন ‘কিছু দারুণ অগ্রগতি’ করেছেন, কিন্তু সেটি কী— সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেননি। পর্যাপ্ত তথ্য না দেওয়ার অর্থ হলো, ট্রাম্প চান মানুষ এ নিয়ে ধারণা করে নানামুখী আলোচনা করুক। ট্রাম্প শুধু একটি বাক্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তা হলো, ‘আমরা সেটা অর্জন করতে পারিনি’। এ কথা বলেই ট্রাম্প সাংবাদিকদের সামনে থেকে চলে যান।

নিজেকে শান্তির দূত ও চুক্তিবাজ হিসেবে প্রচার করতে ভালোবাসেন ট্রাম্প। অথচ তিনি আলাস্কা থেকে ফিরে গেছেনকোনো চুক্তি বা সমঝোতা ছাড়াই।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিয়ে ভবিষ্যতে আরেকটি বৈঠক হবে—এর কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিতও আলাস্কায় ছিল না। যদিও পুতিন বলেছেন (রসিকতা করে), ‘মস্কোতে পরের বার দেখা হবে’।

আলাস্কা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড হলেও সেখানে ট্রাম্পের চেয়ে পুতিনকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতে দেখা গেছে। এখন বড় প্রশ্ন হলো, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বহুবার ট্রাম্প যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন, সেটি কি আরোপ করবেন? ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আংশিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, তিনি হয়তো এমন পদক্ষেপ বিবেচনা করবেন। সেটা দুই সপ্তাহও লাগতে পারে, তিন সপ্তাহও লাগতে পারে।

আলো কাড়লেন পুতিন

কখন একটি সংবাদ সম্মেলনকে আদর্শ সংবাদ সম্মেলন বলা যাবে না? উত্তর- সংবাদ সম্মেলনে যখন কোনো প্রশ্ন নেওয়া হয় না।

সভাকক্ষে সাংবাদিকদের মধ্যে বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ে যখন প্রেসিডেন্ট পুতিন ও ট্রাম্প তাদের বক্তব্য শেষ করেই মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। রাশিয়ান প্রতিনিধি দলও দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করে। সাংবাদিকরা চিৎকার করে প্রশ্ন করলেও তারা কোনো উত্তর দেননি।

এটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এখনো বড় ধরনের মতপার্থক্য আছে।

তাহলে এই বৈঠক থেকে পুতিন কী পেলেন? শুক্রবার মূলত বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন পুতিন। আলাস্কায় তিনি আসার পরপরই ট্রাম্প পুতিনকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেন। যেন অতিথিকে বরণ করছেন। কিন্তু এই বৈঠকটি ছিল মূলত যুদ্ধের মতো ঘটনার প্রেক্ষাপটে। সেখানে ভিন্ন কোনো কিছু করে ট্রাম্প আসলে পুতিনকে বোঝাতেই পারেননি যে, রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত।

বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ, যারা রাশিয়াকে বহুবার নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার হুমকি দিয়েছে- সেই দেশে এসে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সমঝোতা না করে উল্টো আতিথেয়তা নিয়ে চলে গেলেন পুতিন। এটাই কী পুতিনের বড় বিজয় নয়?

ইউক্রেনের সামনে কী অপেক্ষা করছে

অ্যাঙ্করেজে যা ঘটল তা অনেকের কাছে হতাশাজনক মনে হতে পারে। কিন্তু কিয়েভে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা হয়েছে। কেননা, চুক্তি হলে ইউক্রেন হয়তো নিজেদের ভূখণ্ড হারাতো।

তবে একটি বিষয় ইউক্রেনীয়দের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেছেন, সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর না করা পর্যন্ত স্থায়ী শান্তি আসবে না। ইউক্রেনীয়দের মতো করে ভাবলে এমন বক্তব্যের মানে দাঁড়ায়, পুতিন এখনো সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তার এই অভিযানের লক্ষ্য হলো, ইউক্রেনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভেঙে দেওয়া। সাড়ে তিন বছরে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা পুতিনের লক্ষ্য পরিবর্তন করতে পারেনি। ব্যর্থতার তালিকায় নতুন করে যুক্ত হলো আলাস্কার বৈঠক।সূত্র : বিবিসি।

আরও খবর

Sponsered content