সারাদেশ

কক্সবাজারের পেচারদ্বীপ সমুদ্রসৈকতে নিখোঁজ হওয়া চবি দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান মেলেনি এখনও

  প্রতিনিধি ৯ জুলাই ২০২৫ , ১:৩৪:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

আ জা ডেক্স কক্সবাজার :
কক্সবাজারের পেচারদ্বীপ সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সন্ধান ১৪ ঘণ্টায়ও (রাত ৯টা পর্যন্ত) মেলেনি।আর সাগর উত্তাল ও অন্ধকার হয়ে আসায় আপাতত উদ্ধার কার্যক্রমও স্থগিত করেছে লাইফ গার্ড সংস্থা ও ফায়ার সার্ভিস।
গত মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) সকাল ৭টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের পেচারদ্বীপ এলাকায় সাগরে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হন অরিত্র হাসান (২২) ও আসিফ আহমেদ (২২) দুই শিক্ষার্থী। আর তাদের সঙ্গে কে এম সাদমান রহমান নামের আরও এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন। তবে পরে তার লাশ ভেসে আসে।

নিহত সাদমান ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা কে এম আনিছুর রহমানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মো. ফরহাদ হোসেন হলে থাকতেন তিনি। নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থী হলেন বগুড়ার দক্ষিণ সনসনিয়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে অরিত্র হাসান ও বগুড়া সদরের নারুলি দক্ষিণের বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের ছেলে আসিফ আহমেদ। তাঁরা দুজনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ ও আবাসিক হলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মো. ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, পেচার দ্বীপ সৈকতে কোন ধরণের লাইফ গার্ড সেবা নেই। ওখানে লোক সমাগমও তেমন হয় না। শুধু মাত্র কিছু জেলে থাকে যারা মাছ শিকার করে। পেচার দ্বীপ সৈকতের অবস্থা বুঝা যাচ্ছে না। কোথা গুপ্তখাল রয়েছে, তলদেশের কি কিছুই জানা যাচ্ছে না। কারণ সাগর প্রচণ্ড উত্তাল। তাই আপাতত অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় জেড স্কী নিয়ে সাগরে উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র দুই জন লাইফ গার্ড কর্মী লাবনী রয়েছে, তারা লাবনী থেকে নাজিরারটেক সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত উপকূলে টহল চালিয়ে যাবে।

ফয়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কক্সবাজারস্থ স্টেশনের উপ সহকারী পরিচালক মো. তানহারুল ইসলাম বলেন, আপাতত উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যেহেতু অন্ধকার, সাগর উত্তাল; তল্লাশী কার্যক্রমও চালানো যাচ্ছে না। স্রোতের টানও অনেক বেশি। এ অবস্থায় ডুবুরী নামিয়ে তল্লাশীও করা যাচ্ছে না। সাগরের পরিস্থিতি বিবেচনায় যা বুঝা যাচ্ছে, সাগর শান্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। সারাদিনই ফায়ার সার্ভিসের একাধিক টিম সাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছে। আবার বুধবার সকাল থেকে ফের উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীরা সাগরে নিখোঁজ হওয়ার প্রায় তিন ঘণ্টা পর সকাল ১০টা থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী, ফায়ার সার্ভিস, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও কোস্টগার্ড। উদ্ধারকর্মীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল থাকায় অভিযান চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

পেচারদ্বীপ সৈকতে থাকা চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের অপর দুই শিক্ষার্থী ফারহান ও রিয়াদ বলেন, প্রথম বর্ষের লিখিত পরীক্ষা সোমবার শেষ হয়েছে। পরীক্ষা শেষে বিকেলেই ৫ বন্ধু কক্সবাজার ঘুরতে রওনা হয়। রাতে মেরিন ড্রাইভের পেচারদ্বীপের একটি রিসোর্টে রাত্রিযাপন করি। পরে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ৫ বন্ধুই সাগরে যায়। আমরা দুইজন বালিয়াড়িতে অবস্থান করলেও সাগরের পানিতে নামে সাবাব, আসিফ ও অরিত্র। সাগর তখন কিছুটা শান্তি ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সাগরের বড় বড় ঢেউ উপকূলে আসে। এসময় তাদের ৩ জনকে চলে আসতে বললেও আসেনি। কারণ তাদেরকে বার বার বলেছি, তোমরা সাঁতার জানো না। সাগরের পানি থেকে উঠে আস। কিন্তু উঠে না এসে আরও পানির দিকে নামতে থাকে এবং ছবি তোলা অব্যাহত রাখে। কিন্তু হঠাৎ করে বড় বড় ঢেউ এসে তাদের ৩ জনকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তারপর স্থানীয় কয়েকজন জেলে এসে কিছুক্ষণ পর সাবাবের লাশ ভেসে উঠলে কূলে নিয়ে আসে। কিন্তু অপর দুজন অরিত্র ও আসিফের খোঁজ মেলেনি।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, নিহত কে এম সাদমান রহমান সাবাবের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। বাকি দুই শিক্ষার্থী উদ্ধারে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ যেন গোসলে নামতে না পারে, সে বিষয়ে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। নিহত সাবাবের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজ দুজনকে উদ্ধারে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কিন্তু রাত ৯ টা পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সী সেফ লাইফ গার্ড সংস্থা জানিয়েছে, সাগরে গোসলে নেমে মৃত্যুর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত মাসেও ৬ জনের মৃত্যু হয়।

আরও খবর

Sponsered content