নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট:
বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করছে, যার মাধ্যমে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করে জনগণের আস্থা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
শনিবার ২৩ আগস্ট, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের মানবাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছে। তবুও কার্যক্ষমতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে উদ্বেগের কারণে কমিশনের কর্মদক্ষতার সীমাবদ্ধতা ছিল। চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হলো সকল সীমাবদ্ধতা দূর করা এবং মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের শক্তিশালী প্রবক্তা হিসেবে কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃস্থাপন করা।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাথে সমন্বয় করে এবং সুইজারল্যান্ড দূতাবাস ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর সহযোগিতায় এ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে। আজ সিলেটে অনুষ্ঠিত অংশীজন কর্মশালায় ৫০-এরও অধিক অংশীজন অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা শক্তিশালীকরণ বিষয়ে অভিজ্ঞতা শেয়ার এবং মতামত ও সুপারিশ প্রদান করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ সংশোধনের মাধ্যমে কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি কমিশন গঠনে স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন—যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। আইনের সংশোধন ও যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও আস্থাভাজন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই পরামর্শ সভায় সরকারি কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যমকর্মী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা অংশ নেন।
তারা আইনি সংস্কারের মাধ্যমে কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া শক্তিশালী করা থেকে শুরু করে তদন্ত ক্ষমতা বৃদ্ধির মতো নানা বাস্তবসম্মত সমাধান প্রস্তাব করেন, যা রাষ্ট্র ও অ-রাষ্ট্রীয় উভয় ধরনের নির্যাতন মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব জনাব এস. এম. শাফায়েত হোসেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন ২০০৯-এর উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন, যেখানে কমিশনের ম্যান্ডেট, সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ জনাব আনোয়ারুল হক আইনটির বিভিন্ন ধারা সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী মানবাধিকার কমিশনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মোঃ সারওয়ার আলম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণীত হয়েছিল। একটি ভালো আইন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, তার কার্যকর বাস্তবায়ন সমানভাবে জরুরি। তাই আমরা আজ সিলেট থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক পরামর্শের মাধ্যমে আইনটিকে আরও শক্তিশালী ও জনগণের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
পরামর্শ সভা হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন অংশীজনের সুপারিশসমূহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯-এর আইনগত সংস্কারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয়।