প্রতিনিধি ২২ আগস্ট ২০২৫ , ৬:৪৮:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক নারায়ণগঞ্জ:
নবাব সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয়ে একাধিকবার প্রতারণা করে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আলী হাসান আসকারী আবারও নতুন করে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় মিল ও কারখানা অবৈধভাবে দখলের চেষ্টায় তিনি স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সহায়তা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, “আলী হাসান আসকারী” তার প্রকৃত নাম নয়।
রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কোহিনুর আলম কাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এই প্রতারকের সহযোগী হিসেবে কাজ করার। একইসঙ্গে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও মোহামেডান ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড় কায়সার হামিদের বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কাকা ও কায়সার হামিদকে আলী হাসান আসকারীকে নবাবের নাতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতে দেখা যায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ২০২০ সালে গ্রেপ্তারের আগে আলী হাসান নিজেকে স্যার নবাব সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি দাবি করতেন, দুবাইয়ে তার স্বর্ণকারখানা রয়েছে, তার বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, আর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মালিক তিনি নিজেই।
সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করা এই প্রতারক মন্ত্রী-সাংসদ ও সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে ফেসবুকে প্রচার করতেন। এরপর তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে বিনা খরচে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন এবং প্রত্যেকের কাছ থেকে চিকিৎসা সনদ বাবদ ৭৫ হাজার টাকা ও শারীরিক পরীক্ষার জন্য ৮০০ টাকা করে হাতিয়ে নিতেন। এভাবে তিনি কয়েক হাজার মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ আলী হাসান আসকারী (৪৮) ও তার চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া কোম্পানির প্রচারপত্র, নবাব পরিবারের নকল সিল, ওয়াকিটকি, ভিওআইপি সরঞ্জাম, বিদেশে পাঠানোর নামে তৈরি সাড়ে ৩০০টিরও বেশি ভুয়া মেডিকেল সনদ, ল্যাপটপ ও একাধিক সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের তৎকালীন উপকমিশনার মো. মাইফুজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া মামলার আলোকে প্রতারক চক্রের মূল হোতা আলী হাসান আসকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করে।
ফেনীর স্কুলশিক্ষক ও মামলার বাদী আবদুল আহাদ সালমান জানান, ২০২০ সালের মে মাসে ফেসবুকে আলী আসকারির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আলী নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহর নাতি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি দেখান। পরে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তিনি ফেনীর ৪০০ দরিদ্র যুবকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে নেন। এরপর থেকেই আসকারী গা-ঢাকা দেন। সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথের সামনে ব্যানারে থাকা ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে সেখান থেকেও প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সম্প্রতি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সক্রিয় হয়েছে এই প্রতারক চক্র। অভিযোগ রয়েছে, এবার তারা রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্থানীয়রা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।