প্রতিনিধি ২০ আগস্ট ২০২৫ , ২:১৩:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
একে আজাদ:
রাজধানীকে বাঁচাতে হলে শুধু নিয়ম প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, সেই নিয়ম যেন সবার জন্য কার্যকর হয় তা নিশ্চিত করতেও ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, শহরকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার মূল দায়িত্বে থাকা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)কে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। অন্যথায় ঢাকাকে আর বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
বুধবার ২০শে আগস্ট রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নমেন্ট স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজন করে ‘ড্যাপ নিয়ে জটিলতা: টেকসই নগরায়ণ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের প্রেসিডেন্ট সাংবাদিক জিল্লুর রহমান। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী।
সংলাপে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেন, “রাজধানীসহ পুরো দেশ বিশৃঙ্খলভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন দুর্নীতি। মানুষ রাজনীতিকদের দোষারোপ করে, রাজনীতিকরা আবার আমলাদের। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এখন এনজিও-সরকার থাকলেও দুর্নীতি কমেনি।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, “দুর্নীতি কমাতে দেশের মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি। আইন থাকলেই হবে না, তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইন ঘন ঘন পরিবর্তন করা যায় না। কঠিন আইন প্রণয়ন করলে দুর্নীতি আরও বাড়বে।”
তিনি আরও উদাহরণ দেন, “এক সময় পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলা হলো। তখন রাজউক কোথায় ছিল? এখন সেই হাতিরঝিলে আবার বড় খুঁটি বসানো হচ্ছে। এর ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আগের ভবনের জন্য যে অর্থ ব্যয় হয়েছিল, সেটাও নষ্ট হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে।”
জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “রাজপথে যানজট, বাতাসে দূষণ। ঢাকাবাসী এখন হেলিকপ্টারের প্রয়োজন অনুভব করছে। এই শহরের অবস্থার জন্য সবাই দায়ী, কিন্তু সবচেয়ে বেশি দায়ী রাজউক। নতুন করে পুকুর–মাঠ তৈরি কঠিন, তাই যা আছে তা নষ্ট না হওয়ার দিকে নজর দিতে হবে।”
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, “ঢাকামুখী জনস্রোত বন্ধ না হলে ঢাকা বাঁচবে না। ঢাকার বাইরে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে চাকরিতে থাকা মানুষদের বেতন বেশি দিতে হবে, যাতে তারা ঢাকার বাইরে থাকতে আগ্রহী হয়।”
সাংবাদিক এমএ আজিজ বলেন, “ডেভলপার, রাজউক ও সরকার মিলে নেক্সাস তৈরি করেছে। একজন ঘুষ দেয়, আরেকজন নেয়। ঢাকা সরাতে হবে, নইলে সিঙ্গাপুরের মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “রাজউক এক সময় এক নিয়ম করে, ঘুষের পরিমাণ বাড়ে। এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটপাথরও ঘুষের আওতায় আসে। এক জায়গায় বাড়ি হলে বেশি উচ্চতা, অন্য জায়গায় কম উচ্চতা দেওয়া হয়, এটা বৈষম্য। আমরা সমতাভিত্তিক দক্ষ নগরী চাই।”
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি নিলুফার মনি চৌধুরী, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, মানবাধিকারকর্মী ফারজানা শারমিন পুতুল, বারভিডার সাবেক সভাপতি আব্দুল হক, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী, লন্ডনের নর্থ হামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. আলিয়ার হোসেন, ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক দেওয়ান এমএ সাজ্জাদ এবং রিহ্যাবের পরিচালক সেলিম রাজা পিন্টু।